শহিদ রাসেল ::
শিক্ষা গ্রহণের প্রধানতম উদ্দেশ্য হলো মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। মননের গভীরতা ও জীবনের প্রকৃত অর্থ অনুধাবন করতে পারলেই শিক্ষা গ্রহণ সার্থক হয়ে উঠে। আর শিক্ষকের প্রতি অটল বিশ্বাস, সম্মান ও ভক্তি না থাকলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মাঝে অদৃশ্য পর্দা তৈরি হয় যার ফলে শিক্ষা মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। এছাড়া প্রত্যেক শিক্ষককে হতে হবে সময়োপযোগী মান ও যোগ্যতাসম্পন্ন। শিক্ষক যদি আদর্শের কান্ডারী হতে না পারেন তবে শিক্ষার্থীরা অবশ্যই দিকভ্রান্ত হবে। আর দিকহারা শিক্ষার্থীদের অনিশ্চিত ভবিষ্যত দেশ ও জনগণের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তাই শুরুতেই উপযুক্ততা ও মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ, যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাঁদেরকে বলিষ্ট চেতনার ধারক ও বাহকে পরিণত করতে হবে। অযোগ্য, অদক্ষ ও বেক্ডেটেড শিক্ষকের কাঁধে জাতি গড়ার দায়িত্ব ছেড়ে দিলে জাতির মেরুদন্ডে বিশাল বিষফোঁড়ার শক্ত ঘাঁটিÑকেউ ঠেকাতে পারবেনা। এখনকার তোষামুদে শিক্ষাব্যবস্থা, চাকরিভিত্তিক পাঠ্যবই-কোচিং ব্যবস্থা ও কেবল পুরস্কার-প্রতিযোগিতামূলক শিক্ষা নয়, বরং প্রকৃত মানুষ হওয়ার দীক্ষা নেয়ার সাম্য ও সুশাসনভিত্তিক মানবতার শিক্ষাই হতে পারে আমাদের মুক্তির সনদ।
ইন্টারনেট বা তথ্য-প্রযুক্তি সেবা ব্যতিত আধুনিক যুগের (হাইব্রিড!) বিদ্যমান প্রজন্মকে নিয়ন্ত্রণ, দিক-নির্দেশনা প্রদান ও জ্ঞানের রাজ্যে প্রবেশ করানো যাবেনা। ভুল তথ্য পরিবেশন, ফাঁকিবাজি/দুর্নীতি কিংবা নৈতিক স্খলনের বিষয়গুলো এখন সবার কাছে স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান তথা সবাই অবগত, তাই বিভ্রান্তিমূলক ইস্যুগুলোকে যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলার মাধ্যমে পরিশুদ্ধ ব্যক্তিত্ব গঠনে মনোযোগ দিতে হবে। অনলাইন ভিত্তিক তথ্যসমৃদ্ধ সাইটগুলোর সাহায্যে এখনকার তরুণ-প্রজন্ম সকল বিষয়ে অগ্রীম জানার সুযোগ বা ন্যূনতম ধারণা পেয়ে থাকে, তাই শিক্ষকবৃন্দের উচিত সার্বিক বিষয়ে গঠনমূলক প্রস্তুতি নিয়ে ক্লাসে নিজেকে গ্রহণযোগ্যভাবে উপস্থাপন করা। এতে করে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের উচ্চধারণা জন্মায়, বিশ্বাস সুদৃঢ় হয়। কখনো কোনো বিষয় না জানলে বা অস্পষ্টতা থাকলে, তা অবশ্যই শিক্ষার্থীদের সামনে ভুলভাবে উপস্থাপিত হবার আগেই সতর্ক হতে হবে এবং প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জনে যথেষ্ট সময় দিতে হবে। একজন বা মুষ্টিমেয় আনস্মার্ট, ব্যক্তিত্বহীন ও অযোগ্য শিক্ষকের ভুলের খেসারত যেনো পুরো শিক্ষক সমাজকে বহন করতে না হয়। তাই শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা অবশ্যই স্বচ্ছ, সঠিক প্রক্রিয়া ও উচ্চতর মেধা যাচাইয়ের ভিত্তিতে নিতে হবে। এক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের স্বজনপ্রীতি, ঘুষ তথা ন্যূনতম শীতিলতা দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। নিয়োগ কমিটির এতোটুকু খেয়ালীপনা বা অদূরদর্শীতার কারণে জাতি তথা শিক্ষার্থীদের সমগ্র শিক্ষাজীবন ভুলভাবে চালিত হবে, যা মোটেই কাম্য নয়।
একাডেমিক জ্ঞান, চটপটে আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কারিগরি জ্ঞান ও কম্পিউটারে পারদর্শীতা ইত্যাদি না থাকলে বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বের বুকে নেতৃত্ব দেয়াটা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। চ্যালেঞ্জ গ্রহণের জন্য মানসিক দৃঢ়তার পাশাপাশি সহায়ক শক্তি/সহায়তার যথেষ্ট প্রয়োজন আছে। তাই শিক্ষার্থী-প্রজন্মকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্যও একজন আদর্শ শিক্ষক হয়ে উঠার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে। বিনয়, ধৈর্য, কল্পনাশক্তি, উদ্যোক্তা ও উপস্থিত বুদ্ধির যথার্থ প্রয়োগ করার মাধ্যমে একজন আলোকিত ও অনুসরণীয় মানুষ হয়ে উঠা যায়। একজন আদর্শ শিক্ষক মানেই একজন অগ্রগণ্য, আলোর দিশারী ও পথপ্রদর্শক। একজন আদর্শ শিক্ষক হলেন জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ। তিনি মহান দার্শনিকরূপে জাতির ক্রান্তিকালে শক্ত হাতে হাল ধরেন। পথ দেখান। তাই শিক্ষক সমাজকে সুগঠিতভাবে ও সুচারুরূপে উপস্থাপন করতে হবে। তাঁদের মাধ্যমে দেশের ও জনগণের সঠিক প্রতিনিধিত্ব করা সম্ভব। আমরা একটি সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে নিজেদের উপস্থাপনের যে অনন্ত প্রচেষ্ঠা তা নির্ভর করছে যোগ্যতম শিক্ষক শ্রেণির উপর। আদর্শের পতাকাবাহী ওই শিক্ষক সমাজই আমাদেরকে আলোর পথে, উন্নয়নের দিকে, সভ্যতার সাথে জীবনযাপনের সুযোগ করে দিতে পারেন।
লেখক : কবি, সাংবাদিক।।
ংযধযরফৎঁংংবষ১৯৭১@মসধরষ.পড়স
পাঠকের মতামত: